সুনামগঞ্জ , বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
এখনো সার্ভে শেষ হয়নি, গঠিত হয়নি পিআইসি নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে : পুলিশ সুপার ভাটির জনপদের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করব : তোফায়েল আহমেদ খান জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নামছে পুলিশ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আশিক নূর গ্রেফতার ধোপাজানের বালু লুটে নতুন কৌশল! খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাহিরপুরে বহালের দাবিতে স্মারকলিপি হাওরাঞ্চলের কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে নতুনপাড়ায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে বাসার মালিকের স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রগঠনের সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না : এনসিপি নেতা মাসুদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন রাষ্ট্রপতি লন্ডন থেকে প্রেসক্রিপশনে কেউ দেশ চালাতে পারবে না : সাদিক কায়েম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থানান্তরের প্রতিবাদে তাহিরপুরে মানববন্ধন, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি কৃষিখাতে মিথেন দূষণের বিস্তার ঝুঁকিতে নিম্ন ভূমির মানুষ গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মব তৈরি করা হচ্ছে : মির্জা ফখরুল
স্ম র ণ

মিন্টুদা’কে নিয়ে কিছু স্মৃতি

  • আপলোড সময় : ০২-১২-২০২৫ ০২:৫৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-১২-২০২৫ ০২:৫৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
মিন্টুদা’কে নিয়ে কিছু স্মৃতি
এডভোকেট স্বপন কুমার দেব ::>
শহরের জামাইপাড়া নিবাসী রমেন্দ্র কুমার দে, মিন্টুদা সম্প্রতি পরিণত বয়সে পরলোক গমন করেছেন। শহরের মানুষের কাছে আস্থাভাজন মিন্টুদা আরো বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকলে সমাজের জন্য ভালো হতো, এভাবেই পরিচিতজনেরা ভাবেন। এই ভাবনাতেই মিন্টুদা’র মরণের স্বার্থকতা। সরকারি জুবিলী হাই স্কুলে মিন্টুদা আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। স্কুল জীবনে সেভাবে পরিচয় বা মেলামেশা হয়নি। তখনকার বেসরকারি সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হবার পর মেলামেশা শুরু হয়েছিল। মিন্টুদা একবছর আগে ভর্তি হন, আইএসসি-তে। আমিও সায়েন্স আইএস-তে ভর্তি হই। মেলামেশার সূত্র - পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। সেই সময়ের নিষিদ্ধ কম্যুনিস্ট পার্টি প্রভাবিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন অনেক বড় একটি ছাত্র সংগঠন ছিল। বিশেষত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। মহকুমার একমাত্র কলেজ বিধায় বিভিন্ন থানা থেকে অনেক ছাত্রছাত্রীরা সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হতেন। তবে মফস্বলের ছাত্রী সংখ্যা নিতান্তই কম হতো। মেয়েদের কোন হোস্টেল ছিলনা। তাছাড়া মেয়েদের মেস তখন ছিল আইডিয়ার বাইরে। আর তাদের লজিং ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। মিন্টুদা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নিবেদিত প্রাণ হার্ডকোর একজন কর্মী ছিলেন। তখনকার বাতাসে অনেকের সঙ্গে আমি ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হয়ে যাই। সেই সুবাদে মিন্টুদার সাথে চলাফেরা বেড়েছিল। ছাত্র সংসদ ইলেকশনের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এছাড়া আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন তো ছিলই। মিন্টুদা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকতেন। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী ও ধীরস্থির। কথা কম বললেও কাজ বেশি করতেন। মিন্টুদা’র সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। কিছুদিন পরেই সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে নীতিগত প্রশ্নে কম্যুনিস্ট পার্টি বিভক্ত হয়। মস্কোপন্থী ও পিকিংপন্থী। যথারীতি পূর্ব পাকিস্তানের কম্যুনিস্ট পার্টি দুই ভাগ হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে মস্কোপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন। মিন্টুদা’র সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তিনি মস্কোপন্থী। আমি পিকিংপন্থী। সদস্যদের মাঝে উত্তেজনা বাড়ে। জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা ঘনঘন সফর করতেন। কে কাকে দলে টানতে পারে এই নিয়ে যথেষ্ট টানাটানি ছিল। সেটা যাই হোক, মিন্টুদাকে দেখেছি সংগঠনের গঠনতন্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্রদের মাঝে নিবিড় ও নিরলস ভাবে ধৈর্য্য সহকারে কাজ করে যেতে। এতে তিনি যথেষ্ট সফলতা লাভ করেন ও সংগঠনে তাত্ত্বিক নেতা ও একইসঙ্গে কর্মী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বারবার ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ বিজয়ী হতো। এই আবহে শুরু হয় ৬৯-এর ছাত্র গণআন্দোলন। এই আন্দোলনে মিন্টুদা আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত থেকে অবদান রাখেন। সব গ্রুপ একত্রে মিছিল-মিটিং করলেও ভিতরে ভিতরে অনেক সময় গ-গোল লেগে যেত। এমনকি নিজ গ্রুপের মধ্যেও। এ ধরনের উত্তপ্ত পরিবেশে মিন্টুদা নিজেকে কুল রেখে ঠা-া মাথায় অনেক কিছু মীমাংসা করে দিয়েছেন। সেই থেকে মিন্টুদা একজন, ‘সাব্যস্থের মানুষ’ হিসাবে সর্বত্র পরিচিত হন। তিনি আমৃত্যু তা থেকে বিচ্যুত হননি। একসময়ে তিনি কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন ও কমরেড হন। কমরেড নজির হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এছাড়া সুনামগঞ্জ কলেজের ছাত্র দিরাইরে বনবীর রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মিন্টুদাকে দেখেছি কমরেড বরুণ রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পার্টির কাজ করতে। আলফাত উদ্দিন মোক্তার সাব ও প্রতিবেশী আছদ্দর আলী মোক্তার সাব তাঁদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতেন। পান্ডারখাল বাঁধ তৈরির সময় মিন্টুদা দীর্ঘদিন ঘরবাড়ি ছেড়ে নির্মাণ এলাকায় শ্রমিকদের সাথে বসবাস করেছেন। সেখানে অফিস ও রেশন কার্যক্রম মিন্টুদা একাই সামলাতেন। একসময় মিন্টুদা লন্ডন চলে যান। বছর দুয়েক পরে ফিরে আসেন। কিছুদিন জগন্নাথপুরের মীরপুর অঞ্চলের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দীর্ঘদিন ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স সুনামগঞ্জের প্রধান ছিলেন। পূজা উদযাপন পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখায় সহ-সভাপতি হন। টিআইবি সনাকে সদস্য ছিলেন। হাওর বাঁচাও আন্দোলনসহ অনেক সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জনসেবায় নিয়োজিত থাকেন। মিন্টুদা বিয়ের চতুর্থমঙ্গল বা বৌভাত অনুষ্ঠান নিজের বাসায় করেছিলেন। গিয়েছিলাম, মনে আছে বড় বড় রুই মাছের পিস পরিবেশন করা হয়। উনার স্ত্রী যখন অসুস্থ হন হাসপাতালে দেখতে যাই। মিন্টুদা দিনরাত জেগে স্ত্রীর পাশে অবস্থান করেন। মিন্টুদার ছোটবড় ফ্রেন্ড সার্কেলে অনেক বন্ধু ছিলেন।
যাদের কথা মনে আছে - বীর মুক্তিযোদ্ধা সাব্বির আহমেদ মিনু ভাই, জাকেরীন ভাই, আবেদীন ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ বখত, তপন চ্যাটার্জি, ছানাদা, চৌধুরী মঞ্জুর আহমদ মসই ভাই, মঞ্জু বাবু , বিজনদা, অজুদা, কনা মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা রব্বানী ভাই, হুমায়ূন মঞ্জুর ভাই, দবির ভাই, শেলী ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক কোরেশী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ খসরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ত ম সালেহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন ভদ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক, মইনুল ইসলাম, আব্দুন নূর, চন্দন, মানব অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এবারে মিন্টুদা চলে গেলেন। মিন্টুদা নীতির প্রশ্নে বরাবর আপোষহীন ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছি। বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
এখনো সার্ভে শেষ হয়নি, গঠিত হয়নি পিআইসি

এখনো সার্ভে শেষ হয়নি, গঠিত হয়নি পিআইসি